আমরা জানি এ পৃথিবী হাজার হাজার যুগ পেরিয়ে এসেছে। খ্রিষ্টীয় সালের প্রারম্ভ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পৃথিবীর জনসংখ্যা খুব ধীরে এবং পরবর্তীতে তুলনামূলকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই যে সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা পরিবর্তনের তারতম্যকে জনসংখ্যা পরিবর্তনের গতিধারা বলে।
প্রতি দশ কিংবা পাঁচ বছর অন্তর বর্তমান বিশ্বে জাতীয় ভিত্তিতে লোক গণনা করার প্রচলন রয়েছে। ১৬৫৫ সালের আগে তা ছিল না। ধীরে ধীরে এই লোক গণনা প্রসার লাভ করে, বর্তমানে সকল দেশেই জাতীয়ভাবে লোক গণনা করা হয়। লোক গণনায় দেখা যায় যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছিল কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দীর পরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে আসে। তবে পরবর্তী ২০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়। ১৬৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন, ১৮৫০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১.২ বিলিয়ন। ১৮৫০ সালের পর কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়, এর ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি আরও দ্রুত হয়। মাত্র ১০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা আবারও দ্বিগুণ হয়। ১৯৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২.৫৩ বিলিয়ন। যা ২০১৭ সালে ৭.৬০ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। যদি এই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে ২০৩০ সালে অনুমিত জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮ বিলিয়নের উপরে (চিত্র ৭.১)।
পৃথিবীর জনসংখ্যা পরিবর্তন
সাল | জনসংখ্যা (বিলিয়ন) |
১৯৫০ | ২.৫৩ |
১৯৬০ | ৩.০৩ |
১৯৭০ | ৩.৬৯ |
১৯৮০ | ৪.৪৫ |
১৯৯০ | ৫.৩২ |
২০০০ | ৬.১৩ |
২০১০ | ৬.৯২ |
২০১৫ | ৭.৩৫ |
`২০১৭ | ৭.৬০ |
উৎস : UN, Dept. of Economic and Social Affairs, Population Division, 2017
উপরের তথ্য ও বর্ণনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাকে সাধারণভাবে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। যেমন—
প্রাথমিক পর্যায় (Initial Stage)
সুদূর অতীতকাল থেকে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে প্রাথমিক পর্যায় বলে। এ সময় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ও বৃদ্ধির হার উভয় ছিল খুবই কম। এই পর্যায়ে পৃথিবীর সকল অংশেই জন্ম এবং মৃত্যুর হার উভয়ই খুব বেশি ছিল।
মাধ্যমিক পর্যায় (Middle Stage)
১৬৫০ থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে মাধ্যমিক পর্যায় ধরা হয়। এই পর্যায়ে প্রথমে ধীরে এবং পরে দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে কিছু অঞ্চলে মৃত্যুহার হ্রাসের ফলে এবং কিছু অঞ্চলে অভিগমনের ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকা ও এশিয়ায় পূর্বের মতো জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
সাম্প্রতিক পর্যায় (Recent Stage)
১৯৫০ সাল থেকে ২০২১ সময় পর্যন্ত সাম্প্রতিক পর্যায়ভুক্ত। বিগত কয়েক দশকে সমগ্র বিশ্বে জনসংখ্যা
বৃদ্ধির হার সার্বিকভাবে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিশ্বের অঞ্চল ভিত্তিতে দুটি ধারা লক্ষ করা যায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক পর্যায় ২টি ।যথাঃ
১উন্নত অঞ্চল (Developed region)
২উন্নয়নশীল অঞ্চল (Developing region)
উন্নত অঞ্চল বা উন্নত দেশসমূহ
উন্নত অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে ও জনসংখ্যা স্থিতিশীল। জনসংখ্যা কাঠামো দেখলে বোঝা
যাবে এর ভূমি কম প্রশস্ত, উপরের দিকে প্রশস্ততা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্ফীত হয়ে উপরের দিকে গিয়ে আবার সরু হয়েছে (চিত্র ৭.২)। উন্নত দেশসমূহে নারী ও পুরুষের শতকরা বৃদ্ধির হারের খুব বেশি পার্থক্য নেই এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ কম। কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশি, ফলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে তারা যথেষ্ট অবদান রাখে। সাধারণত ০-১৮বছর বয়সের শিশু এবং ৬৫ উর্ধ্ব বয়সের জনসংখ্যাকে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বলে। বাকিদের কর্মক্ষম জনসংখ্যা হিসেবে ধরা হয়।
উন্নয়নশীল অঞ্চল বা উন্নয়নশীল দেশসমূহ
বিশ্বের উন্নয়নশীল অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও যথেষ্ট বেশি। উন্নয়নশীল দেশসমূহে বিগত কয়েক দশকে যে হারে মৃত্যুর হার কমেছে, সে হারে জন্মহার কমেনি। এ দেশগুলোর জনসংখ্যা কাঠামোর ভূমি অত্যন্ত প্রশস্ত এবং শীর্ষভাগ সংকীর্ণ (চিত্র ৭.২)। মোট জনসংখ্যায় শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অনুপাত বেশি। যার ফলে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বেশি। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কম থাকায় অর্থনৈতিক দিক থেকে এই সকল দেশ পিছিয়ে আছে।
জনসংখ্যা কাঠামো(PopulationStructure) : নারী-পুরুষের বয়সভিত্তিক বিন্যাস গ্রাফে প্রকাশ করলে ত্রিভুজ বা পিরামিড সদৃশ যে নকশা তৈরি হয় তাকে জনসংখ্যা কাঠামো বলে। উল্লম্ব অক্ষে (Vertical axis) বয়স এবং অনুভূমিক অক্ষে (Horizontal axis) বামে পুরুষ ও ডানে নারীর সংখ্যা বা শতকরা হার স্তম্ভে স্থাপন করা হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের এরূপ জনসংখ্যা কাঠামোকে জনসংখ্যা পিরামিড (Population Pyramid ) বলে । |
কাজ : নিচের ছকটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য লেখ ।
প্রাথমিক পর্যায় | মাধ্যমিক পর্যায় | সাম্প্রতিক পর্যায় |